ইয়াছীন আলী সরদারঃ

“শৈশবে লাল মুড়ি,কৈশোরে ঝাল মুড়ি,যৌবনে বধূ নারী।”
প্রবাদটি হার মেনেছে দু’ভাই রাম ও লক্ষনের কাছে। রাম লক্ষন দুভাই যেন একে অপরের হৃদপিন্ড। আর সে কারণে ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের মমত্ববোধ কেড়ে নিয়েছে যৌবনের বধূ নারী। বাস্তবতায় বধূ নারী জুটলোনা দুই ভাইয়ের কপালে শরৎচন্দ্রের সেই দেবদাস উপন্যাসের পার্বতীকে তারা হয়তো পায়নি,তবে তা নিয়ে তাদের বিন্দু মাত্র মাথা ব্যথা নেই। ভালবাসার দৃষ্টান্ত শুধু দুভাই। তার একটাই কারণ,ভাইবড়ো ধন রক্তের বাঁধন,যদিও পৃথক হয় নারীর কারণ।এ জন্য ছোট বেলা থেকে দুই ভাই সব সময় একসাথে খাওয়া থেকে শুরু করে সর্বত্র বিচরণ। তাদের দুই ভাইয়ের বয়স এখন যথাক্রমে ৮০ ও ৭৫। অথচ আজও পর্যন্ত দুই ভাই কেউ বিবাহ করে নাই। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দু ভাই বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেড়ায়। হাতে হাত রেখে বিভিন্ন মন্দিরে আশ্রমে। সাদা মনের দুভাইয়ের আসল নাম মৃনাল কান্তি বসু ও ছোট ভাই দীপক কান্তি বসু।

কিন্তু এলাকার মানুষ তাদের রাম লক্ষন সহবিভিন্ন নামে ডাকে। মানুষ ভুলে গেছে তাদের আসল নাম।

তাইতো তাদের নাম দিয়েছে সাহেব মানান্তর, অন্ধ সন্ধ ইত্যাদি। ছোট ছেলে মেয়েরা এ দুভাইকে কোন গ্রামে দেখলে পিছু নেয়।ডাকে তাদের বিভিন্ন নামে। সাহেব মনান্তরের পরিবারের সদস্যদের একসময় খুলনার জেলার পাইকগাছা উপজেলার হরিঢালীতে জমিদারী ছিল।

কালের বিবর্তনে আজ আর নেই। কিন্তু চাল চলনে তাদের ভদ্রতা নম্রতা ও পরিপাটি দেখলে বোঝা যায় তারা সম্ভ্রান্ত পরিবারের। ভদ্রতার নিরিখে আভিজাত্য পরিবারের এ দু-ভাই খুবই অসহায়জীবন যাপন করে থাকে। বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে চেয়ে চিন্তে খায়। তাদের পৈত্রিক ভিটা থাকলেও তাদের পাগল বলে সরলতার সুযোগ নিয়ে ভিটে ছাড়া করেছে কিছু মানুষেরা। সহজ সরল দুভাই সাহেব মনান্তরের আশ্রয় স্হল এখন বিভিন্ন মন্দির আশ্রমে।

সকালের আলো ফুটলে দুইভাই খাদ্যের জন্য বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। কারো কাছে কিছু চায়না। মানুষেরা তাদের দেখলে সামান্য পয়সা দেয়। তা দিয়ে তারা খাদ্য কিনে খায়। সাহেবও মনান্তরের ছোটবেলা থেকে পথ চলার ধরনটা আজও পর্যন্ত পরিবর্তন হয়নি। তারা তাদের চিরচেনা সেই রাজহংসী রাজকীয় দুলকিতে সামনে পিছে করে পথ চলা যেন শেষ হয়না। শিশু কিশোর বয়স্ক সবাই তাদের ভালবাসে।

তাদের শেষ বয়সে এখন সরকারী সাহায্য সহযোগীতা খুবই প্রয়োজন। কারণ তারা ভবঘুরে। এখন তাদের চিকিৎসা ও খাদ্যের বড় প্রয়োজন।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *